বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারোকাতুহ।
সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আবারও আপনাদের মাঝে হাজির হয়ে গেলাম আমার আরেকটা নতুন পোষ্ট নিয়ে। আপনাদের আজকের দিনটা ভালো কাটুক এই দোয়া করি৷ আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার মেসের মিটিং সম্পর্কে কিছু কথা শেয়ার করব৷ চলুন শুরু করি-
প্রতিটা জায়গায় কিছু নিয়ম থাকে। সব সময় নিজের ইচ্ছা বা পছন্দ মতো চলা যায় না। আমি যদি আপনার কর্ম স্থলে সঠিক নিয়ম কানুন মেনে চলতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য সেটা সুফল বয়ে আনবে, আর যদি নিয়ম মানতে অনিহা দেখান তাহলে নানা ধরনের সমস্যায় পরতে হবে। ঠিক জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে একই রকম। যদি নিয়ম মেনে জীবন পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে জীবনের লক্ষ্য ঠিক রেখে চলতে পারবেন, আর যদি জীবনে রুটিনের মধ্যে না রেখে চলেন তাহলে জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাবে। আজ আপনাদেরকে ছাত্র জীবনের কিছু নিয়ম কানুনের কথাগুলো জানাব, যা অনেক ছাত্র জীবনেই মানতে বাধ্য।
যারা ছাত্র জীবনে মেসে থাকে বা থেকেছিল তারাই আজকের পোষ্টটা ভালো বুঝতে পারবেন। আমি গত ২০১৯ সাল থেকে পড়াশুনার জন্য বাড়ি ছেড়ে মেসে থাকি। যানি না কবে এই মেস জীবন শেষ হবে। বর্তমানে এডমিশনের জন্য কোচিং এর একটা আবাসিকে আছি। এটাও মেসই বটে। মেসে থাকলেই হয় না৷ সেখানকার নানা ধরনের নিয়ম কানুন মেলে চলতে হয়, না হলে সিট বাতিল করে দেয়। মানে মেস থেকে বাহির করে দেয়। এজন্য প্রতি মাসের শেষের দিকে একটা মিটিং হয় যেটার নাম দেওয়া হয় মেস মিটিং। এই মিটিং এ মেস সংক্রান্ত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। খাবার কেমন হচ্ছে, কারুর কোনো সমস্যা আছে নাকি তা জানা হয় এবং সেটা সমাধান করার চেষ্টটা করেন মেস কতৃপক্ষ। সামনে আগামি কাল থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে খুশির আনন্দের, ইবাদতের এবং ফজিলতের মাস রমাজন। এই মাসকে ঘিরে মুমিন ব্যক্তির কতশত পরিকল্পনা, ইচ্ছা, প্রার্থনা থাকে। আল্লাহ তায়ালা ও এই মাসে বান্দাদের জন্য হাজারও রহমত, বরকত, মাগফিরাতের ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ এই মাসকে সামনে রেখে গতকাল রাত ৯ টার সময় আমাদের মেস মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
দিনের বেলাতেই মেস পরিচালক সকল রুমে গিয়ে মেস মিটিং এর টাইম, স্থান জানিয়ে দিয়েছিলেন। রাত ৯ টার সময় আমাদের মেস মিটিং শুরু হয়। আমাদের মেসটা সাত তলা বিল্ডিং বিশিষ্ট। মোট ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৮০ জনের বেশি। আমরা সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। মানে এক জায়গায় রান্না হয়। এজন্য এক সাথে সবাইকে নিয়ে মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। আমি এশার নামাজ শেষ করে মিটিং এর স্থানে চলে গেলাম। সেখানে প্রথমে পরিচাকল তাদের মিটিং এর নিয়ম অনুসারে আল-কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মিটিং শুরু করলেন। এরপর একে একে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরলেন। যেমন:-
- কারুর কোনো সমস্যা আছে নাকি জিগাসা করলে।
- খালার সম্পর্কে কারুর কোনো অভিযোগ আছে নাকি। মানে যে রান্না করে তার সম্পর্কে আর কি।
- খাবারের মান কেমন ছিল গত মাসে।
- কে কে মেসের নিয়ম কানুন সঠিক ভাবে মানতেছে না।
- কার কার বিদ্যুৎ বিল এবং ভাড়া বাদ আছে৷
এরকম নানা ধরনের বিষয় পরিচালক আগে বলে নিলেন। তারপর শুরু হলো আমাদের মানে ছাত্রদের কাছ থেকে কথা শুনার। যার যার মতামত সবাই একে একে পেশ করতেছিল।
সব কিছু আলেচনা করার পর রমাজান নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। যেহেতু রমজান মাসে রোজা রাখতে হয়, সারাটা দিন কষ্টের পর ইফতারি করা হয়। এজন্য খাবারের দিকটা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হলো। আমাদের রমাজান মাসে খাবার মেনুটা দুই ভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে, আর খাবারের দায়িত্বে থাকবে মোট পাঁচ জন ছাত্র। প্রতি মাসেই এই দায়িত্ব পাল্টায় এভাবেই সকলকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। রমাজান উপলক্ষ্যে খাবার সিস্টেম হলো:-
১. সাহরীর খাবার ও সন্ধায় হালকা কিছু খাবার থাকবে। |
---|
২. সাহরীতে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে সারা দিন রোজা রাখতে বেশি কষ্ট না হয়। |
৩. ইফতারির জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা। যাতে ইফতারির জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন এবং সুস্বাস্থ্য যুক্ত খাদ্য থাকে। |
এছাড়াও আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলেচনা হলো। এসব আলেচনার পর, কারা এই রমাজান মাসে ম্যানেজারের বা খাবারের দায়িত্ব পালন করবে তাদেরকে সিলেক্ট করা হলো। মোট পাঁচ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই পাঁচ জন আগামি ১৫ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। তারপর আবার অন্য পাঁচ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এভাবেই চলতে থাকবে। রাত ১০ টা পর্যন্ত আমাদের মিটিং চলে। তারপর সকল আলেচনা শেষ করে আমরা আমাদের যে যার রুমে চলে আসি। এভাবেই মূলত আমাদের মেসে প্রতি মাসে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আমি সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টটা করেছি।
আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন৷ সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আবারও দেখা হবে আমার নতুন কোনো পোষ্ট নিয়ে।
আমি ফেনী থেকে,আপনি?
কুষ্টিয়া থেকে।