🎸🎸প্রাণে প্রাণে বাজুক বাংলা লোকগান 🎵 The mystic Folk song of Bengal. 🎻🎻🎻

in voilk •  2 months ago

    বাংলা গানের মুকুটে লোকসংগীত এক উজ্জ্বল মনির মত শোভা পাচ্ছে। বাংগালী মাত্রই এইসকল গানের ভক্ত, যা আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায় এক শক্ত আসন গেড়ে আছে। বাংলা ফোক গান যেমন বিষয়বৈচিত্রে সমৃদ্ধ তেমনি এর আবেদন সাধারন মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে বেড়েই চলেছে। আবহমান কাল ধরে বাংলার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এই সকল গান ঘুরে ফিরছে তাদের হাসি-আনন্দে আর সুখ-দুখের সারথী হয়ে।

    img_0.6987778609640549.jpg

    Source:

    গ্রাম বাংলার মেলা-পার্বণে আর গ্রামে গ্রামে আজও এই ধরনের গানের আসর মাত করে চলেছেন মাটির গানের শিল্পীরা।
    লালন ফকির, শাহ্ আব্দুল করিম, রাধারমন দত্ত, হাসন রাজা, আব্বাসউদ্দীন এবং রমেশ শীল ছাড়াও আরো অনেকে তাদের নিজস্ব ধারার গানে সমৃদ্ধ করেছেন এই বাংলা ফোক গানের রত্নভান্ডারকে।

    img_0.7938063445047615.jpg

    Source:

    বিভিন্ন ঢং-এ বা উপস্থাপন কৌশলে এই গানগুলোকে গাওয়া হয়। কোনটাতে কোরাসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, কোনটাতে আবার নাচের প্রাধান্য বেশী, কোনটা আবার বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই পরিবেশন করা হয়, আবার কোনটা প্রতিযোগীতা বা লড়াই আকারে পরিবেশন করা হয়। ধর্মীয় তত্ত্বতালাশ ছাড়াও এদেশীয় মিথের ব্যাবহার আর মাটি মানুষের কথা আতি সাধারনভাবে ফুটে উঠেছে এইসকল গানে। তাই মানুষের মুখে মুখে ফিরে চলে এই গান, প্রানের স্পন্দন জাগিয়ে বাংলার মানুষের জীবনের সাথে যেন জড়িয়ে আছে এই গান।

    তবে আসুন এই ধারার কিছু গানের সাথে পরিচয় হয়ে যাক।

    বাউল- ফকির লালন শাহ্ এই গানের জগতে একজন প্রবাদপুরুষ। তার গানে যেমন মানব প্রেমের সুরে বেজে ওঠে তেমনি এগুলো বিভিন্ন তত্ত্ব ও জীবনউপদেশে ভরপুর। গানগুলো বাউল সাধকদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলার পথে প্রান্তরে। এই মিস্টিক বাউল সাধকরা আজো উড়িয়ে চলেছেন এই গানের বিজয় নিশান।

    ভান্ডারী- বাংলাদেশের দক্ষিণে এই ধরনের গানের উৎপত্তি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই ধরনের গান এখনো বেশ জনপ্রিয়।

    ভাটিয়ালি- নদীমাতৃক বাংলার নদীর গান বলা চলে এই ধরনের গানকে। জেলে আর মাঝি সম্প্রদায়ের মানুষের হাত ধরেই এই গান আজ হয়েছে সমৃদ্ধ। নদীকেন্দ্রীক জীবনযাপন করা সাধারণ মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর জীবনবোধের এক আশ্চর্য অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে এই ধরনের গানে। শাহ্ আব্দুল করিম আর আব্বাসউদ্দীন এই ধরনের গানে তাদের নিজস্ব প্রতিভার প্রমান রেখেছেন।

    img_0.9728032426383145.jpg

    Source:

    img_0.1398179525127332.jpg
    Source:

    img_0.4753718087684263.jpg

    Source:

    ভাওয়াইয়া- উত্তরের গান হিসেবে পরিচিত এই গানগুলো গাওয়া হত মূলতঃ পথ চলার শ্রান্তিকে দূর করার জন্য। উত্তরের ধুলি ধূসর মেঠোপথে গরু বা মহিষের গাড়িই ছিল একমাত্র যানবাহন, এই গাড়ীর চালকদের (গাড়োয়ান) মুখে মুখে ফিরে চলত এইগান। তপ্ত দুপুরে গাড়োয়ানের মুখে সেই ভাওয়াইয়া গানের সুর আজো অনেকের কানে বাজে।

    গম্ভীরা- রাজশাহী অঞ্চলের অতন্ত্য জনপ্রিয় এক ধরনের গান হলো এই গম্ভীরা। একটু আলাদা ঢংয়ে আর সুরে গাওয়া হয় এই গান। নানা এবং নাতির মিষ্টি মধুর বয়ানে এই গান হয়ে উঠেছে পারফরমেটিভ আর্ট এর এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

    হাসন রাজার গান- সিলেট অঞ্চলের মানুষ হাসন রাজা এই গানের পথিকৃৎ। ভক্তি এবং আধ্যাত্মিক ভাব সম্পর্কিত এই গান যেন বাংলার মানুষের কথাই বলে।

    জারীগান- দুই দলের গানের লড়াই নামে পরিচিত এই গান। সুর আর কথার এক অপুর্ব সংমিশ্রণ এই ধরনের গান। মুখে মুখেই গানের কথা রচনা করতেন এই গানের শিল্পীরা।

    ঝুমুর গান- নাচভিত্তিক এই গান এপার এবং ওপার বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন এথনিক গোষ্ঠীর সুর ও কথা ছাড়াও বৈচিত্রপূর্ন নাচের ব্যবহার এই গানে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়।

    কবিগান- কবিগান মুলত কবিদের গাওয়া স্বরচিত গানের লড়াই। সাধারণত খুব কম বাদ্যযন্ত্র ব্যাবহার করা হয় এই ধরনের গানে। এন্টনি ফিরিঙ্গী, হরু ঠাকুর আর ভোলা ময়রা হলেন বাংলা কবিগানের জগতে তিন রত্ন। এককালে বাংলার গ্রামে গঞ্জে কবিগানের আসর মাত করে রাখতেন তারা।

    বিভিন্ন বিচিত্র বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় এই গান পরিবেশনে। সেতার, বাশি, হারমনিয়াম, একতারা, দোতারা, খমক, ঢাক-ঢোল ইত্যাদির ব্যবহার বাংলাদেশের লোকগানের ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে যা বিশ্বসঙ্গীতের আসরে আজ উজ্জ্বল হয়ে আছে।

    বাংলার লোকসংগীত আমাদের এক অমূল্য সম্পদ। একে রক্ষা করার সাথে সাথে এর চর্চাকে বাড়ানোর ব্যপারে কাজ করতে হবে। তবেই এই গান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আলোর মুখ দেখতে পাবে।

    ধন্যবাদ!!

    তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

      Authors get paid when people like you upvote their post.
      If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE VOILK!